অটোপাস: এক দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা সংকট

অটোপাস আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে যখন আমি মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখনও জানতাম না যে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য এইচ.এস.সি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়েও আমাদের জীবনে এমন একটি পরিবর্তন আসবে যা আমাদের ভবিষ্যৎকে সম্পূর্ণ বদলে দেবে। কোভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহতা এবং এর ফলে সৃষ্টি হওয়া লকডাউন পরিস্থিতি আমাদের জীবনযাত্রাকে একদমই অচল করে দেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, অনিশ্চিত পরীক্ষা দিনক্ষণ, এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগ – সব মিলিয়ে আমাদের মানসিক অবস্থা ভয়ানকভাবে প্রভাবিত হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের থেকে বারবার গুজব আর সংশোধনমূলক ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী এক অবর্ণনীয় মানসিক চাপে ছিলাম। যখন পরীক্ষার কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা হচ্ছিল না, তখন শিক্ষার্থীরা এক প্রকার দিশেহারা হয়ে পড়ে। শেষমেশ, অটোপ্রমোশনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। অনলাইন থেকে শুরু করে রাস্তায় নেমেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হয়, যদিও লকডাউন পরিস্থিতির কারণে রাস্তায় নামা ছিল বেশ কঠিন।

অটোপাস: এক মিশ্র অনুভূতি

অবশেষে, অটোপাসের ঘোষণা আসে। প্রাথমিকভাবে এটি ছিল আমাদের জন্য স্বস্তির কারণ। এমন এক সমাধান যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক আলোকরশ্মি হয়ে আসে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই অটোপাস হয়ে দাঁড়ায় আমাদের জন্য এক অভিশাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষায় প্রবেশের প্রতিটি ধাপে আমাদের অবহেলা এবং তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়।

যারা এস.এস.সি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেনি, কিন্তু এইচ.এস.সি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তাদের জন্য অটোপাস এক ধরণের বঞ্চনা হিসেবে এসেছে। তাদের অনেকেই এস.এস.সি এর ফলাফলের চেয়েও খারাপ ফল করেছে, যা তাদের জন্য আরো হতাশাজনক ছিল। অন্যদিকে, যারা শুধুমাত্র একটি ডিগ্রির জন্য এই পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল, তাদের জন্য এটি ছিল সুবিধাজনক।

অটোপাস: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা

আমরা যারা ২০২০ সালের এইচ.এস.সি ব্যাচের অংশ ছিলাম, তারা এখন বুঝতে পারি যে অটোপাস আমাদের জীবনের একটি বড় কালিমা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের জুনিয়ররা আজ আমাদের এই কালিমার জন্য আমাদেরকে তাচ্ছিল্য করছে। তারা জানে না যে আমরা ছিলাম পরিস্থিতির শিকার। আমরা যে কষ্ট ভোগ করেছি, তা যেন তাদের সহ্য করতে না হয়, এই কারণেই আমরা তাদের অটোপাসের দাবিতে আন্দোলন না করার পরামর্শ দিচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এই অটোপাসের জন্য আমাদের উপর যে অবহেলা এবং অপমান এসেছে, তা যেন তাদের না সইতে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পরীক্ষা না দিয়ে পাস করা সম্মানের কিছু নয়। এর চেয়ে পরীক্ষা দিয়ে ফেল করাও অনেক বেশি সম্মানজনক।

উপসংহার: ভবিষ্যতের পথে আমাদের শিক্ষার সঠিক মূল্যায়ন

অটোপাসের সুবিধা এবং অসুবিধার মধ্যে দিয়ে আমাদের জীবন বদলে গেছে। আমরা চাই না আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও এই ভুলের শিকার হোক। অটোপাস যে কখন অটোবাঁশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা একমাত্র আমরা, ২০২০ সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থীরাই বুঝতে পারি। তাই আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিচ্ছি যে, এই ভুল করবেন না। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।